Home | Media | Sep 06, 2020

করোনা ও বন্যা সংকটে ব্যাংকে ভরসা ১১ শতাংশ কৃষকের

করোনা সংক্রমণের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে তিনটি দুর্যোগে ফসল নষ্ট হওয়া, বাজারে দাম কম পাওয়া ও কৃষি উৎপাদনসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে আর্থিক সংকটে পড়েছেন কৃষক। তাদের সহায়তায় ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু নানা জটিলতায় কৃষকরা ব্যাংক থেকে প্রণোদনা নিতে পারছেন না। মাত্র ১১ শতাংশ কৃষক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছেন। বাকিরা স্থানীয় এনজিও, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কৃষিকাজ সচল রাখছেন। কৃষি, পরিবেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ওয়াচের (ডিএম ওয়াচ) এক জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ‘কৃষক ও কৃষি উৎপাদনে করোনা ও বন্যার প্রভাব’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

সারাদেশের কৃষিভিত্তিক ৩০টি অঞ্চলের মধ্যে ৩টির ১০টি জেলার ১২০ কৃষকের ওপর জরিপ চালিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। মধ্য মে থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত ওই জরিপ চালানো হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণের মধ্যে ৩৭টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বেশকিছু জেলায়। জরিপে অংশ নেওয়া ৮০ ভাগ কৃষক বলেছেন, ভয়াবহ এই দুর্যোগকালে কীটনাশকের দাম বেড়েছে। ৮৫ ভাগ বলছেন- শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। ৭৫ ভাগ বলছেন- বীজের দাম বাড়ছে এবং ৭৩ ভাগ কৃষক সারের দাম বাড়ার কথা বলছেন। এ কারণে চাষবাসের ব্যয় বেড়েছে। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে তাদের অর্থ সংকট তীব্র হয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ের ৮৩, ক্ষুদ্র পর্যায়ের ৭৫ এবং মাঝারি পর্যায়ের ৫৯ শতাংশ কৃষক বলছেন, তারা অর্থ সংকটে পড়েছেন। কৃষকদের অর্থ সংকট কাটাতে সরকার ৪ শতাংশ সুদে ব্যাংকঋণ পেতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কিন্তু তীব্র এই অর্থ সংকটের মধ্যেও কৃষকদের মাঝে ঋণ বিতরণ করছে না ব্যাংকগুলো। ৫ জুলাই পর্যন্ত ৪৩টি ব্যাংকের মধ্যে ১৩টি এখনো ঋণ বিতরণ করেনি। তহবিল থেকে মাত্র ৪৯৭ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন ১৭ হাজার ৯৮০ কৃষক। করোনা ও বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে আগামীতে চাষবাস শুরুর জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার চিন্তা করছেন মাত্র ১১ শতাংশ কৃষক। আর অর্থ সংকট কাটাতে ২৮ শতাংশ কৃষক ঋণ নেবেন এনজিও থেকে। ২৫ শতাংশ কৃষক ঋণ নেবেন স্থানীয় মহাজন বা অন্য কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে। ৮ শতাংশ কৃষক নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি করবেন। তবে অর্থ সংকট কাটাবেন কীভাবে সিদ্ধান্ত নেননি ২১ শতাংশ কৃষক।

সংবাদ সম্মেলনে ড. ফয়সার কবির বলেন, জরিপ এবং সরকারি সংস্থার তথ্যমতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর্থিক সংকটে পড়েও অর্থ সহায়তা পাচ্ছেন না। কৃষকদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও ব্যাংকের নানা কাগুজে জটিলতায় তারা ঋণ পাচ্ছেন না। সরকারের উচিত কৃষকদের কৃষি উৎপাদনে ফিরে যেতে সহায়তা করা। এ জন্য তাদের অর্থ সংকট, বীজ সংকটসহ অন্য সংকট কাটাতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ডিএম ওয়াচের ম্যানেজিং পার্টনার বায়েজিদ হাসান, সিনিয়র ম্যানেজার হাবিবুর রহমান সালমান, ম্যানেজার কাজী এহসানুল বারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র – আমাদের সময়

Share on:

Back to top